top of page

নদী রক্ষায় শুধুই প্রতিশ্রুতি

Md Najmul Hasan Khan

আমরা আরও একটি আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উদযাপন করে ফেললাম। অথচ আমাদের নদীগুলোকে রক্ষা করতে এর মধ্যে অর্থপূর্ণ তেমন কিছুই করতে পারিনি। বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার।

দিবসটি উপলক্ষে গতকাল সোমবার দ্য ডেইলি স্টারে শীতলক্ষ্যা এবং এর শাখা বালু নদীর কুচকুচে কালো পানির একটি ছবি ছাপা হয়েছে। অবিবেচকের মতো শিল্প কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলে পানির এমন অবস্থা হতে পারে, ছবিটি তারই সাক্ষ্য দেয়। এ ধরনের বিবেকহীন চর্চা প্রতিরোধের আহ্বান জানাতে ছবিটি ছাপা হয়েছে।

নদী রক্ষার জন্য একটি কর্মকৌশল প্রণয়নে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও, দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ খুবই উদাসীন। যেমন, সীমানা পিলার বসানোর পরও বুড়িগঙ্গা নদীর ২ তীরের প্রায় ১০০ একর জায়গা মাটি ভরাট অবস্থায় রয়ে গেছে বলে দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বিক্ষিপ্তভাবে কিছু অভিযান চালিয়ে নদী দখল করে তৈরি কিছু অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করেছে। তবুও প্রভাবশালীরা নদীর উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করেই চলেছে। উপরন্তু, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পাড়ে নদী ভরাট করে ৯০টি শিপইয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে।

২০০৯ সাল থেকে হাইকোর্ট বারবার সরকারকে বুড়িগঙ্গার আদি সীমানা এবং তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার সীমানা নির্ধারণের নির্দেশ দিয়ে আসছেন। এ ছাড়াও নদীর প্রকৃত রূপ ফিরিয়ে আনতে এবং দখল ও দূষণ থেকে নদী রক্ষার নির্দেশ আছে আদালতের। ২০১৬ সালের একটি রায়ে নদী দখলকে ফৌজদারি অপরাধ বলে অভিহিত করেন আদালত।জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (এনআরসিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে নদী দখলকারীর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। এত সংখ্যক দখলকারী কীভাবে তৈরি হয়? এর একমাত্র ব্যাখ্যা হলো, সরকার দখলদারদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিয়ে শক্তিশালী কোনো নজির স্থাপন করতে পারেনি।

আবার আগের কথাতেই ফিরে যাই। উচ্চ আদালত, পরিবেশবাদী এবং সাধারণ জনগণ বারবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশের নদীগুলো রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কয়েক দশক ধরে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার জন্য রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা বারবার একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ ক্ষেত্রে তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে দায়ী।

এ অবস্থায় দেশের নদীগুলোকে রক্ষা করতে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। এই পরিকল্পনার মধ্যে অবশ্যই একটি বাস্তবসম্মত সময়সীমা উল্লেখ করতে হবে এবং তা অনুসরণ করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হবে।



Comments


bottom of page