শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে দুইটা বিষয় যেইটা নিয়ে তার সমর্থকদের অনেক ফ্যাসিনেশন সেইগুলা নিয়ে দুইটা কথা বলতে চাই।
শেখ মুজিবুর রহমান অনেকদিন জেল খাটছেন, বাঙালির জন্য। কথাটা সত্য যে তাকে দীর্ঘদিন জেলে আটক রাখা হইছিল পাকিস্তান আমলে। তবে সবসময় শুধু বাঙালির পক্ষে কথা বলার জন্য আটক করা হইছে ব্যাপারটা তা না। একবার তাকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তারও করা হইছিল। পরে দীর্ঘসময় জেলে থাকতে হইছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়।
আইয়ুব খানের সরকারের সেই অভিযোগ যে সত্য ছিল তার প্রমাণ মেলে আওয়ামী লীগ নেতা কর্ণেল শওকত আলীর সত্য মামলা আগরতলা বইতে। আমার ধারণা বাংলাদেশের কোন অংশকে স্বাধীন করার চেষ্টা করলে বাংলাদেশ সরকারও সেই রাজনীতিবিদকে জেলেই ভরতো। ভারতে উলফা এবং শ্রীলঙ্কায় এলটিটিই'র বহু নেতা স্বাধীনতার জন্য দিনের পর দিন জেলে ছিলেন, মারা গেছেন।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কী, উলফা বা তামিলদের নেতাদের যে সৎ সাহস ছিল, সেই সৎ সাহস শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের কোনকালেই ছিল না। তারা তাই তখন প্রচার করে বেড়াইছেন এইটা একটা মিথ্যা মামলা এবং শেখ মুজিব অনেক বড় পাকিস্তান প্রেমী, এবং সে এমন কিছু করতেই পারে না। শুধু ছয় দফা পেশ করায় তার বিরুদ্ধে এই "মিথ্যা মামলা" করা হইছে। (http://sacw.net/article9162.html)
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য শেখ মুজিবুর রহমানের জেল জীবন আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দিদের মত ছিল না যার একটা ধারণা পাওয়া যায় তার শিষ্য নূরে আলম সিদ্দিকীর সাক্ষাৎকার থেকে। শেখ মুজিবকে জেলে আলাদা কক্ষ দেয়া হত, এমনকি তার কক্ষে তালাও দেয়া হত না। একটা ধারণা দেই শুধু-
"বঙ্গবন্ধু ছাড়া আমাদেরকে ফাইলের (পরিদর্শন) সময় সেলে আটকে রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দেয়া হতো। মুজিব ভাই দেওয়ানিতে সম্পূর্ণ অবমুক্ত থাকতেন। ইজি চেয়ারে স্বাভাবিক অবস্থায় তিনি বসে থাকতেন। বছরে একবার আইজির পরিদর্শনকালেও এর কোনো ব্যতিক্রম হতো না।" (https://mzamin.com/details-archive2016.php?mzamin=98053)
নূরে আলম সিদ্দিকী তখনকার সময়ের হিসাবে ছাত্রলীগেরও তৃতীয় সারির নেতা ছিলেন। তাকে যে সম্মান দেয়া হত, সেই সম্মান এখন বিরোধীদলের কোন প্রথম সারির নেতাকেও দেয়া হয় না।
"কারাগারে আমাদের অবস্থান ছিল সম্মানিত (রাজবন্দি)। খাওয়া-দাওয়া রাজসিক ছিল বলাই চলে। বন্ধু শামসুর রহমান ছাড়া অন্য ডেপুটি জেলাররা প্রায়শই আমাদেরকে স্যার বলে সম্বোধন করতেন।"
বাড়ির প্রধান ব্যক্তি কারাগারে আটক থাকলে কী ধরণের আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে সেই পরিবারকে যেতে হয় তা আমরা জানি। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য এটা কোন সমস্যা ছিল না। তার পাকিস্তানের বাইশ পরিবার, যাদের তারই দলের নেতারা বৈষম্যের জন্য দায়ী করত, তাদের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
এই বাইশ পরিবারের একটির প্রধান ছিলেন ইউসুফ হারুন। এই ইউসুফ হারুনের ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে শেখ মুজিব ছিলেন নামকাওয়াস্তের কর্মকর্তা। প্রায় পনের বছর এই হারুন পরিবার শেখ মুজিবুর রহমানকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে গেছেন। এমনকি যখন তিনি জেলে ছিলেন, তখনো এই বেতন তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হত। সত্তরের নির্বাচনে তিনি শেখ মুজিবকে ৩ লক্ষ ডলারের সমপরিমাণ টাকা দিয়েছিলেন। (https://www.nytimes.com/.../rich-pakistani-friend-of...)
এছাড়া একে খান এবং ইস্পাহানিদের সাথেও ছিল তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। তাঁদের থেকেও বড় ধরণের অর্থ পেতেন শেখ মুজিব। তাই তখনকার অনেক ডাকসাইটে নেতার ঢাকায় কোন সম্পদ না থাকলেও, ঢাকার প্রাণকেন্দ্র ধানমন্ডিতে পাকিস্তান আমলে দুই তলা বাড়ি ছিল বিরোধীদলের নেতা শেখ মুজিবের।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, 'বাঙালির' জন্য কারাগারে বন্দি থাকার ব্যাপারটাকে আওয়ামী সমর্থকেরা যেভাবে ব্যবহার করে তাতে মনে হয় শেখ মুজিব একাই জেল খেটেছেন আর কেউ খাটেননি।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক জেল খাটতে খাটতে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন, যার খোঁজ কেউ রাখেনি আর পরে। এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানেও ওয়ালি খানের মত নেতাদের দীর্ঘদিন জেলে কাটাতে হয়েছে। বামপন্থী রাজনীতি ছিল পাকিস্তানে নিষিদ্ধ, তাই বামপন্থী নেতারা একবার জেলে গেলে বের হওয়া ছিল তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। অর্থাৎ অনেক নেতাকেই তখন জেলে বন্দি করা হত কথায় কথায়।
কিন্তু এই নেতারা পরে জেলে বন্দি না হয়ে আত্মগোপনে থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিলেও, শেখ মুজিব তার প্রায় রাজকীয় জেল জীবনকেই আজীবন বেছে নিয়েছেন। তাই কোন আন্দোলনের নেতৃত্বেই তাকে কখনও পাওয়া যায় নাই। এইটাই রূঢ় সত্য।
ঊনসত্তরে ভাসানী বের হয়ে এসে ইপিআরদের রাইফেল ধরে আন্দোলনে যোগ না দিলে, বা পশ্চিমে ভুট্টোরা আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে না নামলে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্যে কী ঘটতো তা ধারণা করা মুশকিল।

Thanks for writing true information!
নাজমুল সাহেব বাংলাদেশে আসেন আপনার নামে আইসিটি আইনে মামলা দেয়া হবে।